বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে—ভূমি মন্ত্রী
হোসেন বাবলা,চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপি বলেছেন, মাদক একটি বড় ধরনের সমস্যা। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাদকের বিরুদ্ধে সর্বত্র সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নতুন প্রজন্মকে অবশ্যই মাদক থেকে দূরে রাখতে হবে। সরকারী-বেসরকারী গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদকের কুফল ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতাসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণে যেমন বলেছিলেন ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে, ঠিক তেমনই মাদকের বিরুদ্ধেও ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও সচেতনতার মাধ্যমে মাদকের অপব্যবহার সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। ১৫মার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডস্থ পর্যটন হোটেল সৈকতের সাঙ্গু ব্যাঙ্কুয়েট হলে আয়োজিত “মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধকল্পে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন” বিষয়ক কর্মশালা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কর্মশালার আয়োজন করেন। তিনি বলেন, কিছু মাদক মেডিকেলে রোগীদের কাজে ব্যবহার করা হয়। ফেনসিডিল ও গাঁজা থেকে মাদকের সূত্রপাত বলে মনে হয়। যারা ফেনসিডিল খায় তারা এখন ইয়াবাসহ অন্য মাদক সেবন করে। বড় লোকের ছেলেদের কীসের টেনশন? তারা সকালে উঠে বাবার হোটেল খাচ্ছে। তারা ফ্যাশনের জন্য মাদকসেবন করেন। আনোয়ারা- বাঁশখালী রোড ব্যবহার করে একসময় মাদক পাচার হতো। এখনো বিভিন্ন রোড ব্যবহার করছে। প্রতিটি মহল্লায় মহল্লায় এ ধরনের কর্মশালা করতে হবে। ইন্টারনেট এসেছে, সেটার কারণে মাদক ব্যবহার কম হচ্ছে। আমি ফেসবুক পছন্দ করি না। কাজে কর্মে যারা আছে তারাও ব্যবহার করছেন। যাদের প্রয়োজন নেই, তারও ব্যবহার করছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, একসময় আমরা টেলিভিশনের ওপর নির্ভর করতাম। এখন আমরা সেটা করছি না। এখন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে জানতে পারছি। আমাদের আগামী প্রজন্মকে মাদকমুক্ত গড়ার জন্য প্রত্যেকের অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। আগামী প্রজন্মকে প্রস্তুত করে যেতে না পারলে এই দেশ সোমালিয়া হয়ে যাবে।বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা জননেত্রী শেখ হাসিনা তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। গত ১৩বছর এদেশ এগিয়ে গেছে। দক্ষ জনগোষ্ঠীর অভাব হয়েছে। তবে দক্ষদের চাকরি আছে, তাদের চাহিদা আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনা করা হলে দিন ও রাতের পার্থক্য হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
পাকিস্তানের সঙ্গে এত পার্থক্য হবে, কেউ স্বপ্নে ভাবেনি জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, বাংলাদেশ যে শক্ত মজবুত জাতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে তা বিশ্ব স্বীকৃত দিয়েছে। এটা সরকারের ধারাবাহিকতার জন্য সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানের টাকার মান আমাদের চেয়ে অনেক কম। আমাদের ১টাকা পাকিস্তনের দেড় টাকার উপরে আমার জানা মতে। পাকিস্তনের চেয়ে সব ক্ষেত্রে আমাদের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। একটা সুন্দর ব্যালেন্স দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। টিসিবির গাড়ির দিকে মানুষ যাচ্ছে আমরা দেখতেছি জানিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন, সরকার বসে নেই। সরকার এটা নিয়ে কাজ করছে। সরকার এটা উপলব্ধি করেছে। আমরা এটাকে কমফোর্ট জোনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কীভাবে সরবরাহ বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে কাজ করছি। বাস্তবতাও মানতে হবে। যুদ্ধের বিষয়ে আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। যুদ্ধের প্রভাব আগামী তিন মাস পরে পড়বে। করোনার সঙ্গে দুই বছর যুদ্ধ করেছে পৃথিবী। সমস্ত সরকারকে এটা মোকাবিলা করতে হচ্ছে।রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব তেলের বাজারে পড়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন বলেন, মাদক উৎপাদনকারী দেশ নয়, প্রতিবেশী দেশ উৎপাদন করে থাকে। মাদকের অপব্যবহার হতো, মাদক ইয়াবার পর এখন আইস এলএসডি, ডিওবি এখন মাথাব্যথা, এসব ড্রাগ লেখা প্রিন্টের মাধ্যমে বহন করা হচ্ছে। আগামী কয়েক বছর পর আমরা একটা অক্ষম জনগোষ্ঠী পাব। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী কমে যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঠিকানা বিহীন লেনদেন হচ্ছে। যা এনফোর্সমেন্ট করে ঠেকানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কারাগারে ৬০শতাংশ মাদক মামলার আসামি। কারাগারে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানের অনেকে জড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে চাকরিচ্যুৎ হচ্ছে অনেকে। ৫-৭বছর পর, অক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে পাব। যে জ্যামিতিক হারে চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বন্ধ করার বিকল্প নেই। স্বাগত বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, বর্তমান সরকার মাদকাসক্তি মুক্ত বাংলাদেশ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মাদক ব্যবসায়রা নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে নতুন ধরনের মাদক পাচার ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তরুণদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। মাদকের এ আগ্রাসন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ত করছে যা দেশের উন্নয়নের অন্তরায়। যুব সমাজ তথা জাতিকে মাদকের এ ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষার লক্ষ্যে মাদক বিরোধী সর্বাত্মক সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির বিকল্প নেই। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিন বলেন, যদি মাদকের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে না পারি তাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৩০ ও ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে নিরাময় কেন্দ্র পরিচালনা করে চিকিৎসার গুণগত মান বৃদ্ধি করে মাদকাসক্ত রোগীদের ফিরিয়ে আনতে হবে। উঠান বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার করার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

মাদকের সরবরাহ ও চাহিদা হ্রাসের জন্য আয়োজিত এ কর্মশালার মাধ্যমে দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হবে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজকে সাথে নিয়ে একযোগে এই যুদ্ধে নামতে হবে। তিনি আরও বলেন, সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান পরিচালনা এবং মাদকাসক্তদের বিদ্যমান সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা সেবা প্রদান জরুরি। তারই আলোকে মাদক নির্মূলে সমন্বিত খসড়া কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এ খসড়া কর্মপরিকল্পনাটি পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করে নিড বেইজড কর্মপরিকল্পনা চুড়ান্ত করা হবে। কর্মপরিকল্পনার আলোকে ওয়ার্ড, গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পৌরসভা, জেলা, বিভাগে : বছর ব্যাপী মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান থাকবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিজিবি’র ডেপুটি রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আজগর বলেন, অল্প পরিশ্রম আয় হচ্ছে সীমান্ত এলাকায়। সীমন্ত এলাকায় বর্ডার রিং রোড হচ্ছে। বিভিন্ন সীমান্তে যে গ্যাপ আছে, তা কমে যাবে। সম্পূর্ণ নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছে আমেরিকা। তারপরও মাদক যাচ্ছে। সন্তানেরা মাদকের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হচ্ছে। তাদেরকে এ ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় পারিবারিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে মাদক একটি বড় অংশ। বিভিন্ন কারণে মাদকের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা না থাকলে সরবরাহ হতো না। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে জনগোষ্ঠীকে মাদকের ছোবল থেকে দূরে রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। চট্টগ্রাম বিভাগী: কমিশনার মোঃ আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেনস্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মোঃ মোকাব্বির হোসেন, বিজিবি’র ডেপুটি রিজিয়ন কমান্ডার কর্নেল রাশেদ আজগর ও পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ ইকবাল হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ আব্দুস সবুর মন্ডল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মজিবুর রহমান পাটওয়ারী। কর্মশালায় বিভাগের ১১জেলার জেলা প্রশাসক, ডিডিএলজি, এডিএম, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন, পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, র্যাব ও কোস্টগার্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শক, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগ ও জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ