পরীর পাহাড়ে পাঁচ ভবনসহ সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ’র নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ
হোসেন মিন্টুঃ
চট্টগ্রাম নগরীর পরীর পাহাড়ে আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবী সমিতির ৫ ভবনসহ সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণ এবং নতুন কোনো স্থাপনা নির্মাণ না করতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আইন মন্ত্রণালয়কে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক চিঠিতে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া সাক্ষরিত চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, একই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর গত বছরের দেওয়া নির্দেশনা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান মঙ্গলবার দৈনিক নব দেশ বার্তাকে বলেন, গোপনীয় প্রতিবেদনের আলোকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে গতকাল জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং এখানে যত অবৈধ স্থাপনা আছে এগুলো অপসারণের জন্য। এবং এখানে যাতে আর নতুন কোনো স্থাপনা না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট চারটি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি করে আইন মন্ত্রণালয় এটি বাস্তবায়ন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সোমবারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের আগস্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরীর পাহাড়ে আইনজীবীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং আর কোনো স্থাপনা যাতে নির্মিত না হয় সে বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার বিভাগকে নির্দেশনা প্রদান করেন, সেই নির্দেশনা অদ্যবধি বাস্তবায়ন হয়নি। উপরন্তু নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে জেলা আইনজীবী সমিতি নির্বিচারে বৃক্ষ কর্তন করে অনুমোদনবিহীন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘বাধা উপেক্ষা করে’ গভীর নলকূপ স্থাপন এবং গত জুনের প্রবল বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধসের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পরীর পাহাড়ে সৃষ্ট ঝুঁকি ও সম্ভাব্য যে কোনো বিপর্যয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি প্রতিরোধে জেলা আইনজীবী সমিতির পাঁচটি বহুতল ভবনসহ সব অবৈধ স্থাপনা অপসারণ ও নতুন কোনো স্থাপনা যাতে নির্মিত না হয় সে বিষয়ে এই নির্দেশনা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর আগেও ২৫টি সরকারি দপ্তর থেকে এই পাহাড়ের ‘অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা’ উচ্ছেদে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। ‘কোর্ট হিল’ বা ‘পরীর পাহাড়ে’ আইনজীবীদের নতুন ভবন নির্মাণ নিয়ে আইনজীবী সমিতি ও জেলা প্রশাসনের বিরোধ চলছে গত প্রায় ১১ মাস ধরে। বর্তমানে এই পাহাড়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, নতুন আদালত ভবন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন এবং আইনজীবীদের পাঁচটি ভবনসহ বেশ কিছু সরকারি কার্যালয় রয়েছে। পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে গত সেপ্টেম্বরে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী। আদালত ভবন এলাকায় আইনজীবীদের চেম্বারের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যেই ‘পরীর পাহাড়ের’ ১৩০ বছরের পুরনো দ্বিতল আদালত ভবনটিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার প্রস্তাব দেয় জেলা প্রশাসন।এরপর পরীর পাহাড়কে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা (হেরিটেজ) হিসেবে সংরক্ষণে জেলা প্রশাসনের প্রস্তাব বিবেচনা করার কথা জানায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই পাহাড়ে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং নগরীর অন্যত্র সরকারি দপ্তর মিলিয়ে মোট ৪৪টি সরকারি অফিস কালুরঘাটে সরিয়ে নিতে একটি প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।১৮৯৩-৯৪ সালে ছয় লাখ টাকা ব্যয়ে রাইটার্স বিল্ডিং এর আদলে দুই তলা চট্টগ্রাম আদালত ভবন নিমার্ণ করা হয়। সেই থেকে সোয়া একশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভবনে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। পরে বিভিন্ন সময় ভবনটি সংস্কার করা হয়। ২০১০ সালে পুরাতন আদালত ভবনের পিছনে চারতলা নতুন আদালত ভবন নির্মাণ করা হয় ৩২ কোটি টাকা খরচে। শতবর্ষী পুরাতন আদালত ভবনটি সংস্কার করে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সেখান থেকে।

নিউজটি শেয়ার করুনঃ